ব্রেকিং নিউজ: আইপিএলের নিলামে ইতিহাস গড়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সে গোপালগঞ্জের সাকিব


আইপিএলের নিলাম মানেই উত্তেজনা। এবারও ২৪-২৫ নভেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেগা নিলামে অনেক নতুন মুখ নজর কেড়ে নিচ্ছে। তবে তাদের মধ্যেও এক নাম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে—সাকিব। কিন্তু এটি বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নন। তিনি ভারতের বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার তরুণ পেসার সাকিব হুসেইন। এই ২০ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার ইতোমধ্যেই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে আলোচনায় এসেছেন।

২০০৪ সালে বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার দরগা মহল্লায় জন্ম সাকিব হুসেইনের। কৃষক বাবার আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে বড় হওয়া সাকিবের শৈশবে স্বপ্ন ছিল সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশসেবা করার। তবে পরিচিতদের পরামর্শে ক্রিকেটে মনোযোগ দেন এবং ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, তার ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে ক্রিকেটের মধ্যেই।

সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সকালে দৌড়ানো শুরু করলেও একসময় ক্রিকেটই তার জীবনের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও তিনি পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে মত্ত ছিলেন। ৫০০-১০০০ রুপি পারিশ্রমিকে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের সহায়তাও করতেন।

সাকিবের ক্রিকেট যাত্রার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন মিন্টু ভাইয়া নামে এক ব্যক্তি। তার অনুপ্রেরণায় সাকিব বড় স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলেন। ২০২১ সালে বিহার ক্রিকেট লিগে নজর কাড়ার পর বিহার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা পান তিনি। এর মধ্যেই পরিচিত হন আরেক মেন্টর, কোচ রবিন সিংয়ের সঙ্গে। তার পরামর্শেই চন্ডীগড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে নজর কাড়েন সাকিব।

চন্ডীগড় থেকে সাকিব জায়গা করে নেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখান থেকে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি খেলার সুযোগ পান। ওই টুর্নামেন্টের সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজরে আসেন। এরপর চেন্নাই সুপার কিংসের নেট বোলার হিসেবে প্রশংসা কুড়ান মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সৌরভ গাঙ্গুলীর।

২০২৩ সালের আইপিএল নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যে সাকিবকে দলে নেয়। তার নাম দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, এটি হয়তো বাংলাদেশের সাকিব। তবে পুরো নাম জানার পর ভুল ভাঙে। যদিও দলে সুযোগ পেলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি তিনি।

সাকিবের মা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ছেলের জন্য ভালো জুতা কেনার সামর্থ্যও ছিল না তাদের। এ কারণে তিনি নিজের অলঙ্কার বিক্রি করেছিলেন। এবার সাকিবের ভিত্তিমূল্য বেড়ে হয়েছে ৩০ লাখ রুপি। ‘নিউজ ১৮’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে তিনি অনুশীলনে ঘণ্টায় ১৫০-১৫৫ কিমি গতিতে বোলিং করছেন।

বর্তমানে রঞ্জি ট্রফিতে বিহারের হয়ে খেলছেন সাকিব। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১১৪ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা পারফরম্যান্স দিয়েছেন। কর্ণাটকের বিপক্ষেও ২ উইকেট নিয়েছেন। এসব পারফরম্যান্স তাকে আইপিএলে একটি নিয়মিত জায়গা করে দেওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আইপিএল সাকিবের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। নিলামের প্রাথমিক রাউন্ডে অবিক্রিত থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাকে দলে নেয়ার ইতিহাস রয়েছে। এবার মাঠে নামার সুযোগ পেলে নিজের মায়ের আত্মত্যাগের মূল্য দিতে চান তিনি। গোপালগঞ্জের মফস্বল থেকে উঠে আসা এই তরুণ ক্রিকেটারের গল্প ইতোমধ্যেই ভারতীয় ক্রিকেটে আলোচনার কেন্দ্রে।

২০২৪ আইপিএল কি তার জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারবে? উত্তর মিলবে নিলামের পর।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *